শিরোনাম :
সাপ্তাহিক আলোর মনি পত্রিকার অনলাইন ভার্সনে আপনাকে স্বাগতম। # সারাবিশ্বের সর্বশেষ সংবাদ পড়তে আমাদের সঙ্গেই থাকুন। -ধন্যবাদ।
শিরোনাম :
লালমনিরহাটে জাতীয় ভিটামিন ‘এ’ প্লাস ক্যাম্পেইন উপলক্ষে প্রেস ব্রিফিং অনুষ্ঠিত লালমনিরহাটে অপহরণকৃত শিশুর মৃতদেহ উদ্ধার, চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলার আসামী গ্রেফতার ও হত্যার রহস্য উদঘাটন লালমনিরহাটে মাহে রমজানে নিত্যপণ্যের বাজার স্থিতিশীল; ক্রেতারা স্বস্তিতে লালমনিরহাটের বিএনপি নেতার অবৈধ ইটভাটা গুড়িয়ে দিল প্রশাসন লালমনিরহাটে শিশু ধর্ষণের প্রতিবাদে ও ধর্ষকদের ফাঁসির দাবিতে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত লালমনিরহাটে বসতবাড়িতে সবজি চাষে উদ্বুদ্ধকরণের জন্য নারী কৃষকদের মাঝে বীজসহ অন্যান্য কৃষি উপকরণ বিতরণ অনুষ্ঠিত লালমনিরহাটে তৃতীয় শ্রেণির মাদ্রাসা শিক্ষার্থীকে অপহরণ করে চাঁদার দাবি না পেয়ে হত্যা তিস্তা ভবন রংপুরে স্পার বাঁধের ভাঙন রোধের দাবিতে শান্তিপূর্ণ অবস্থান ও মানববন্ধন অনুষ্ঠিত লালমনিরহাটে বাংলাদেশ স্কাউটসের ত্রৈ-বার্ষিক কাউন্সিল সভা অনুষ্ঠিত লালমনিরহাটে “তিস্তা নদীর সমন্বিত ব্যবস্থাপনা ও পুনরুদ্ধার” শীর্ষক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত

তিস্তা নদীর জুড়ে এখন ধু ধু বালু চর

পানি না থাকায় তিস্তা নদীর প্রায় ১শত ৩০কিলোমিটার জুড়ে এখন ধু ধু বালু চরে পরিণত হয়েছে। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের একতরফা শাসন নীতির কবলে পড়ে বসন্তেই যৌবন হারিয়ে মরতে বসেছে এক কালের প্রমত্তা তিস্তা নদী। তিস্তা নদীর পাড়ে নেই মাঝি-মাল্লা আর জেলেদের হাঁক-ডাক। প্রায় অকেজো হয়ে পড়েছে দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজ। তিস্তা নদীর মূল গতিপথ এখন বালুর স্তুপে পরিণত হয়েছে।

 

ভরা বর্ষা মৌসুমে তিস্তা সেচ প্রকল্পের তিস্তা ব্যারাজ রক্ষায় খুলে দেয়া হয় ৫২টি জল কপাট। এতে ব্যারাজের আশপাশের বাসিন্দাসহ ভাটিতে থাকা লক্ষ লক্ষ সাধারণ মানুষ হয়ে পড়ে পানিবন্দি। নদী ভাঙ্গণে বসতভিটাসহ সহায় সম্বল হারিয়ে নিঃস্ব হয় তিস্তা নদীর পাড়ের মানুষ। আশ্রয় নেয় বাঁধের ধারে কেউ বা অন্যের জমিতে। পক্ষান্তরে প্রতি বছরই বন্যার পর কয়েক মাসের ব্যবধানে সেই প্রমত্তা তিস্তা নদী পরিণত হয় ধু-ধু বালুচরে।

 

পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত গজলডোবায় বাঁধ নির্মাণের মাধ্যমে একতরফা তিস্তার পানি নিয়ন্ত্রণ করায় প্রতি বছর বর্ষা শেষ হতে না হতেই বাংলাদেশ অংশ পরিণত হয় মরা খালে। ৩শত ১৫কিলোমিটার দীর্ঘ তিস্তা নদীর বাংলাদেশ অংশের প্রায় ১শত ৩০কিলোমিটার এখন মরুভূমি। দিন দিন প্রায় অকার্যকর হয়ে পড়েছে দেশের বৃহত্তম তিস্তা ব্যারাজ সেচ প্রকল্পটি।

 

পানি না থাকায় তিস্তা নদীর বুকে মাছ শিকার করতে ছুটে চলা ডাহুক, পানকৌড়িসহ অসংখ্য পাখ-পাখালিদের উড়ে যাওয়ার চিরচেনা দৃশ্য এখনও আর চোখে পড়ে না। তারাও যেন মুখ ফিরিয়ে বিদায় নিয়েছে যৌবনা তিস্তা নদী থেকে। তিস্তার বুকে জেগে ওঠা চরাঞ্চলের বালু জমিতে কঠোর পরিশ্রম করে চাষাবাদ করা চাষিদের বিভিন্ন জাতে শস্য মরে যেতে বসেছে। তিস্তার নদীর বালুচরে গর্ত করে পানির অস্থায়ী উৎস সৃষ্টির মাধ্যমে শস্যক্ষেতে সেচ দেন এসব কৃষক। কিন্তু পানি স্তর নিচে চলে যাওয়ায় প্রতিদিন সেচ দিয়েও রক্ষা হচ্ছে না ফসল। এছাড়াও শত কষ্টে চাষাবাদ পণ্য মূলভূখন্ডে নিতে গুণতে হচ্ছে অতিরিক্ত পরিবহন খরচ। পানি থাকলে নৌকায় সহজে ও কম খরচে শস্য পরিবহন করা যেত। ফলে বেশি খরচ ও পরিশ্রম করে উৎপাদিত শস্যের ন্যায্যমূল্য বঞ্চিত হচ্ছেন এসব এলাকার চাষি।

 

তিস্তা নদীর উপর নির্মিত তিস্তা সড়ক সেতু ও কাকিনা-মহিপুর তিস্তা সড়ক সেতু যেন এখন বালু চরে প্রহসনে দাড়িয়ে আছে। পানি শূন্য তিস্তা নদীর বালুচর এখন হেঁটেই পাড়ি দিচ্ছে মানুষজন। ঢেউহীন তিস্তায় রয়েছে শুধু বালু কণা। নেই মাছ বা নৌকার ছুটে চলার চিরচেনা দৃশ্য। সব মিলে পানি শূন্য তিস্তা পাড়ের জীববৈচিত্র্য আজ হুমকির মুখে। জীববৈচিত্র্যের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। বেকার হয়ে খাদ্যকষ্টে পড়েছেন তিস্তা নদীর বুকে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহকারী হাজারও জেলে ও মাঝি-মাল্লাদের পরিবার।

 

দেখা গেছে, তিস্তার মূল নদীতে বড় বড় বালুর স্তুপ। তিস্তা নদীতে পানি নেই। চোখ জুড়ে শুধুই ধু ধু বালুচর। তিস্তা ব্যারাজের উজানে পানি আটকানোর চেষ্টা করছে ভারত। এতে করে যেটুকু পানি উজানে জমছে তাতেই ব্যারাজটির মাধ্যমে ইরি-বোরো ধানের জন্য সেচ কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।

 

তিস্তা পাড়ের বাসিন্দারা বলেন, এই তিস্তা নদী আমাদের কোনো উপকারে আসে না। শুধু প্রতি বছর ভাঙ্গণে আর পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় দুই পাড়ের মানুষ।

 

ভারতের সিকিম রাজ্য থেকে উৎপত্তি ঐতিহাসিক তিস্তা নদী ভারতের পশ্চিমবঙ্গের উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে লালমনিরহাটের পাটগ্রাম সীমান্ত হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। যা লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর ও গাইবান্ধা জেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে কুড়িগ্রাম জেলার চিলমারী বন্দর হয়ে ব্রহ্মপুত্র নদীর সঙ্গে মিশে গেছে।

 

এদিকে লালমনিরহাটে আগামী সোম ও মঙ্গলবার (১৭ ও ১৮ ফেব্রুয়ারি) “জাগো বাহে-তিস্তা বাঁচাই” স্লোগান নিয়ে তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলন এর পক্ষে “তিস্তা মেগা প্রকল্প” বাস্তবায়নের দাবীতে তিস্তা নদীর দু’পাড়ে ৪৮ ঘন্টাব্যাপী জনতার সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।

 

ইতোমধ্যে সকল ধরনের প্রস্তুতি শুরু করেছে তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলন এর প্রধান সমন্বয়কারী অধ্যক্ষ আসাদুল হাবিব দুলু।

 

উল্লেখ্য, তিস্তা অববাহিকার রংপুর অঞ্চলের মানুষের জীবন-জীবিকার মূল চালিকা শক্তি তিস্তা নদী। এক সময়ের প্রমত্তা তিস্তাকে এ অঞ্চলের জীবনরেখা বলা হতো। কিন্তু তিস্তা নদীর উজানে বাঁধ নির্মাণের কারণে তিস্তা আজ শীর্ণ, স্থবির একটি মরা নদীতে পরিণত। বর্ষা ও খরা উভয় মৌসুমে তিস্তা এখন এ অঞ্চলে গণমানুষের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। বর্ষাকালে বাঁধ থেকে বিনা নোটিশে পানি ছাড়ায় তিস্তার দুকূল প্লাবিত হয়ে মানুষের ঘর-বাড়ী, আবাদি ফসল মুহুর্তে নিশ্চিহ্ন করে, জনজীবন বিপন্ন করে তোলে। আবার খরা মৌসুমে তিস্তার পানি প্রবাহ শুন্যের কোটায় নেমে আসে। ফলে নদীর দুপাড়ে মাইলের পর মাইল এলাকা মরুভূমিতে পরিণত হয়ে চাষাবাদের অযোগ্য হয়ে পড়ে। তিস্তা একটি আন্তর্জাতিক নদী। কিন্তু এই তিস্তা অববাহিকার মানুষ দীর্ঘদিন পানির ন্যায্য হিস্যা থেকে বঞ্চিত। তিস্তা মেগা পরিকল্পনা বাস্তবায়নে চলছে রাজনৈতিক স্থবিরতা। তাই পানির ন্যায্য হিস্যা ও তিস্তা মেগা পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে মানুষের দূর্বিসহ বিপন্ন অবস্থা থেকে মুক্তি পাওয়ার পক্ষে আগামী ১৭ ও ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ইং ৪৮ ঘন্টা তিস্তা নদীর পাড়ে অবস্থান কর্মসূচী। অবস্থান কর্মসূচীতে সকল স্তরের জনগণকে অংশগ্রহণ করে “তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলন” সফল করার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন৷ তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলন এর প্রধান সমন্বয়ক অধ্যক্ষ আসাদুল হাবিব দুলু।

সংবাদটি শেয়ার করুন




এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা ও ছবি অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি
Design & Developed by Freelancer Zone